ইসলামের অন্যান্য দিবসের মত শবে বরাত ও মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস। বাংলাদেশ সহ সমগ্র বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোতে শবে বরাত অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পালন করা হয়। এই রাতে আল্লাহ তার বান্দাদেরকে ক্ষমা করে থাকেন বিধায় সকল মুসলিমরা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে গভীর রাত পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদত করে থাকে।
বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের মুসলিমরা অনেকেই রোজা রাখার মাধ্যমে আবার অনেকেই নামাজ আদায় করার মাধ্যমে শবে বরাত উদযাপন করে থাকে। তবে বর্তমান সমাজে শবে বরাত নিয়ে অনেক বেদাত প্রচলিত থাকায় অবশ্যই আপনাকে সঠিকভাবে শবে বরাতের নামাজের নিয়ম জেনে নামাজ আদায় করতে হবে।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম
আল্লাহর নবী (সাঃ) শাবান মাসের ১৪ ও ১৫ তারিখ অর্থাৎ মধ্য শাবানের রাত সম্পর্কে বলেছেন, “যখন তোমাদের কাছে শাবানের রাত ( শবে বরাত ) হাজির হবে, তখন তোমরা সেই রাত জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী তথা নামাজ, জিকির ও কুরআন তিলাওয়াত কর এবং দিনের বেলা সাওম পালন কর”।
উক্ত হাদিসটি থেকে বোঝা যায় শবে বরাতের রাতকে আল্লাহর নবী (সাঃ) কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই আমাদের শবে বরাতের নামাজের নিয়ম অনুযায়ী নামাজ আদায় করতে হবে। এছাড়াও আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) রমজান মাসের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য শাবান মাসে অধিক পরিমাণে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগি করতেন।
শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও দোয়া
নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, শবে বরাতের রাতে আল্লাহ পাক তার বান্দাদের ক্ষমা করে দেন শিরিক কারী ও হিংসুক ব্যতীত। সকল প্রকার পাপ থেকে মুক্তি পেতে নিচের দোয়াটি শবে বরাতের রাতে বেশি বেশি পাঠ করতে পারেন। কেননা নিচের দোয়াটি বেশি বেশি পাঠ করায় মহান আল্লাহ পাক আদম (আঃ) ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।
দোয়াটি হলো- রাব্বানা জলামনা আনফুসানা ওয়া ইল্লাম তাগফির লানা ওয়া তারহামনা লানাকুনান্না মিনাল খাসিরিন। (সুরা আরাফ, আয়াত : ২৩)
উক্ত দোয়াটির বাংলা অর্থ হলো, হে আমাদের রব! আমরা আমাদের প্রতি জুলুম করেছি। আপনি যদি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং রহমত না দেন তা হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে গণ্য হবো।
শবে বরাতের নামাজ কত রাকাত
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসে অন্য মাসের তুলনায় অধিক পরিমাণে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী করতেন। তবে তিনি (সাঃ) শবে বরাতে রাতের কত রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে সে সম্পর্কে কোন নির্দেশনা দেননি। তবে আপনি চাইলে সাধারণ নফল নামাজের নিয়তে যত রাকাত ইচ্ছা নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।
শবে বরাত নামাজের নিয়ত
মধ্য শাবানের রাত অর্থাৎ শবে বরাতের রাতে নামাজ পড়তে হলে নামাজের নিয়ত করতে হবে। অন্তরে নামাজের নিয়ত থাকলে মুখে উচ্চারণ না করলেও ইনশাআল্লাহ নামাজ হয়ে যায়। তবে অনেকেই আরবি নিয়ত করার মাধ্যমে শবে বরাতের নামাজ আদায় করতে চায়।
নাওয়াইতুআন্ উছল্লিয়া লিল্লা-হি তাআ-লা- রাকআতাই ছালা-তি লাইলাতিল বারা-তিন্ -নাফলি, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা-জিহাতিল্ কাবাতিশ্ শারীফাতি আল্লা-হু আকবার।
শবে বরাতের নামাজ কিভাবে পড়তে হয়
হিজরী মধ্য শাবানের রাতকে শবে বরাতের রাত বলা হয়। শবে বরাতের নামাজ পড়ার জন্য সবার আগে সঠিক ভাবে সুন্দর করে ওযু করে নিতে হবে। তারপরে নামাজে দাঁড়িয়ে নিয়ত করে সূরা ফাতিহা পাঠ করার পর পবিত্র কুরআনের অন্য যেকোন সূরা বা আয়াত পাঠ করতে হবে।
এরপর রুকু ও সেজদা করার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করতে হবে। অতঃপর পূর্বের ন্যায় দ্বিতীয় রাকাত সম্পন্ন করে শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ ও দোয়া মাসুরা পাঠ করে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে দুই রাকাত নফল নামাজ শেষ করতে হবে।
শবে বরাতের নামাজ কি সুন্নত নাকি নফল
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সকল নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে নির্দেশনা দিয়েছেন সে সকল নামাজকে সুন্নত নামাজ বলা হয়। শবে বরাতের রাতে বিশেষ কোনো নামাজের ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কোন নির্দেশনা দেননি তাই শবে বরাত উপলক্ষে কোন সুন্নত নামাজ নেই।
নফল নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে কোন সীমাবদ্ধতা নেই কেননা নফল নামাজ অতিরিক্ত ইবাদত হিসাবে গণ্য হয়। এছাড়া নফল নামাজ যে কোন সময় যত রাকাত ইচ্ছা পড়া যায়। তাই আপনি চাইলে শবে বরাতের রাতে যত রাকাত ইচ্ছা নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।
শবে বরাতের নামাজের সূরা
প্রিয় নবী (সাঃ) মধ্য শাবানের রাতে নামাজ পড়ার জন্য কোন বিশেষ সূরার কথা উল্লেখ করেননি। তাই সাধারণ নফল নামাজে যেমন সূরা ফাতিহার সাথে অন্য যেকোনো সূরা মিলিয়ে পড়া হয়। তেমনি ভাবেই শবে বরাতের নফল নামাজ আদায় করতে হবে। তবে আপনি চাইলে সুরা ফাতিহার পরে সূরা ইখলাস একাধিকবার পাঠ করতে পারেন।
শেষ কথা
শবে বরাত বছরে একবার পালন হওয়ায় আমাদের নামাজ আদায় করার সময় অনেক ভুল ভ্রান্তি হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই আজকের পোস্টে শবে বরাতের নামাজের নিয়ম ও শবে বরাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানানো হয়েছে যা আপনাদের ভুল হওয়া থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে ইনশাল্লাহ।
আরও দেখুনঃ