বাংলাদেশে প্রতি বছর আনুমানিক ৩০ লাখ শিশু জন্মগ্রহণ করে। এর মধ্যে অসংখ্য শিশু প্রতিবন্ধী হয়ে জন্মগ্রহণ করে। অথবা গর্ভ অবস্থায় থাকাকালীন অপুষ্টি জনিত কারণে জন্মের পর তাদের নানা প্রতিবন্ধকতায় পড়তে হয়।
বাংলাদেশ সরকার সকল মায়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করে থাকে। তবে অনেকেই জানেনা এই ভাতার জন্য কিভাবে আবেদন করতে হয়। নিচে মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম
গর্ভবতী নারীরা যদি মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করেন তাহলে প্রতিমাসে ৮০০ টাকা করে ভাতা পাবেন। আপনি যদি দরিদ্র সীমার নিচে বাস করেন তাহলে প্রতি ৬ মাস অন্তর অন্তর ২৪ মাস পর্যন্ত এই মাতৃত্বকালীন ভাতা পেতে পারেন।
মা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে মাতৃত্বকালীন ভাতার ফর্ম সংগ্রহ করতে হবে। এরপর ফরমটি পূরণ করে ইউনিয়ন পরিষদে জমা দিলে। তারা আপনার ফর্মটি যাচাই-বাছাই করে আপনাকে মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য অনুমোদন দিবেন।
মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার নিয়ম
গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন বেশ কিছু শর্তাবলী পালন করার মাধ্যমে মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়া যায়। আপনি যদি প্রথম কিংবা দ্বিতীয় বার সন্তানের মা হয়ে থাকেন তাহলে মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া আপনি মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য অনলাইনে কিংবা অফলাইনে সরকারের নিকট আবেদন করতে পারেন।
মাতৃত্বকালীন ভাতা ২০২৩-২৪ অনলাইন আবেদন
শিশুদের পুষ্টিহীনতা রোধ করণে ও সুস্থ স্বাভাবিক শিশু জন্মদানের জন্য সরকার ২০০৮ সাল থেকে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করে আসছে। মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য আপনি চাইলে অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। নিচে মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম কয়েকটি ধাপে দেওয়া হল।
প্রথম ধাপঃ প্রথম ধাপে আপনাকে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করতে হবে। ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে আপনার এনআইডি কার্ড তথা জাতীয় পরিচয় পত্র অনুযায়ী তথ্য প্রদান করতে হবে।
দ্বিতীয় ধাপঃ ব্যক্তিগত তথ্যের পর এবার দ্বিতীয় ধাপে আপনার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা সহ সকল তথ্য দিতে হবে। আপনি যে এলাকার ভোটার সেই এলাকার গ্রাম, ব্লক/রাস্তা/সেক্টর, জেলা, উপজেলা, বিভাগ, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, পোস্ট কোড, সহ যাবতীয় তথ্য দিতে হবে।
তৃতীয় ধাপঃ এই ধাপে আপনার অর্থ ও সামাজিক তথ্য প্রদান করতে হবে। আপনার মাসিক আয় সহ এবং বসতভিটা, পুকুর, কৃষি জমি অথবা প্রতিবন্ধী কিনা এই সকল যাবতীয় তথ্য এই ধাপে প্রদান করতে হবে।
চতুর্থ ধাপঃ এই ধাপে আপনার পেমেন্টের তথ্য দিতে হবে। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কোন ব্যাংক/মোবাইল ব্যাংক এর তথ্য দিতে পারেন। যার মাধ্যমে আপনাকে পরবর্তীতে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেওয়া হবে।
পঞ্চম ধাপঃ সর্বশেষ ধাপে আপনার ছবি ও স্বাক্ষর প্রদান করার মাধ্যমে আবেদনটি শেষ করতে হবে। ছবির ক্ষেত্রে অবশ্যই পাসপোর্ট সাইজের ছবি জমা দিতে হবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা আবেদন করতে কত টাকা লাগে
যেহেতু গরিব অসহায় মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করা হয়। তাই মাতৃত্বকালীন ভাতার জন্য আবেদন করতে কোন টাকা বা ফ্রি প্রদান করতে হয় না। তবে অফলাইনে অর্থাৎ ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে আবেদন করলে ৪০ টাকা আবেদন ফি প্রদান করতে হয়।
মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রাপ্তির জন্য কাগজপত্র
গর্ভবতী মেয়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রাপ্তির জন্য যে আবেদন করতে হয় তাতে বেশকিছু কাগজপত্রের দরকার পড়ে। নিচে আবেদনের জন্য কি কি কাগজপত্র প্রয়োজন হবে তা দেওয়া হল।
- সরকারি অনুমোদিত কোন হাসপাতাল থেকে গর্ভধারণের মেডিকেল রিপোর্ট কপি।
- পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি এবং ভোটার আইডি কার্ড ও জন্ম নিবন্ধন সনদ।
- উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কর্তৃক গর্ভকালীন সনদ।
- টাকা গ্রহণের জন্য ১১ ডিজিটের (বিকাশ/নগদ) মোবাইল ব্যাংকিং নাম্বার। ইত্যাদি।
মাতৃত্বকালীন ভাতা পাওয়ার শর্তাবলী
সকল গর্ভবতী মেয়েদের মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদান করা হয় না। কেননা এই ভাতা পাওয়ার জন্য কিছু শর্ত দেওয়া রয়েছে। এই শর্তগুলো যদি আপনার সাথে মিলে যায় তাহলে আপনি মাতৃত্বকালীন ভাতা পাবেন। নিচে শর্তসমূহ দেওয়া হল।
- বয়স ২০ থেকে ৩৫ বছর হতে হবে এবং প্রথম বা দ্বিতীয় গর্ভধারিত হতে হবে।
- মাসিক আয় ১৫০০ টাকার নিম্নে ও বসতবাড়ি রয়েছে বা অন্যের জায়গায় বাস করে এমন হতে হবে।
- দারিদ্র প্রতিবন্ধী মা অগ্রাধিকার পাবে এবং ভাতা ভোগী অবশ্যই গর্ভধারণ পাঁচ মাস বয়স হতে হবে।
- সবশেষে আবেদনকারী কে অবশ্যই গর্ভবতী থাকতে হবে।
মাতৃত্বকালীন ভাতা নিয়ে সতর্কতা
গর্ভবতীদের মাতৃত্বকালীন ভাতা নিয়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ব্যাংক/মোবাইল ব্যাংকের তথ্য কারো সাথে শেয়ার না করা। এছাড়া অনেক অসাধু লোক ভাতা দেওয়ার নামে ঘুষ বা টাকা দাবি করতে পারে।
শেষ কথা
বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ হওয়ায় অনেক মায়েরা গর্ভাবস্থায় পুষ্টিকর খাবার খেতে পারে না। তাই তারা মাতৃত্বকালীন ভাতার আবেদন করার জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা অনলাইন আবেদন করার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলেন। আশা করছি এই পোস্ট থেকে তা জানতে পেরেছেন।