প্রথমে জানতে হবে কি কি কারণে মানুষের পায়খানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। শিশু বাচ্চা ও প্রাপ্ত বয়স্ক প্রায় সবারই এই ধরনের সমস্যা থাকে। মূলত কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে পায়খানা না হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়, যা অনেকে জানে না। স্বাভাবিক ভাবে পায়খানা ক্লিয়ার হওয়ার জন্য আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে হবে। তাই জানতে হবে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার প্রধান কারণ কি কি এবং কিভাবে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। কি খেলে পায়খানা হবে? পায়খানা ক্লিয়ার হওয়ার জন্য কোন ঔষধ খেতে হবে তা জেনে নেওয়া যাক।
কি খেলে পায়খানা হবে
কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ কিন্তু অস্বস্তিকর শারীরিক সমস্যা, যা অনেকের দৈনন্দিন জীবনকে কঠিন করে তোলে। টয়লেটে দীর্ঘ সময় কাটানোর পরও যদি পেট পরিষ্কার না হয় বা মলত্যাগ করতে কষ্ট হয়, তাহলে এটি একটি চিন্তার বিষয়। সাধারণত, মলত্যাগ যদি সপ্তাহে তিনবারের কম হয়, মল শক্ত বা শুকনো থাকে, অথবা মলত্যাগ করতে অনেক পরিশ্রম করতে হয়, তখন এটিকে কোষ্ঠকাঠিন্য হিসেবে ধরা হয়। এর প্রধান কারণ হতে পারে অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, পানি কম পান করা, কিংবা শরীরচর্চার অভাব। এ সমস্যার সমাধানে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান, সুষম খাদ্যগ্রহণ এবং নিয়মিত শরীরচর্চা অত্যন্ত কার্যকর হতে পারে।
তবে ডাক্তারের পরামর্শে বিভিন্ন ধরনের ঔষধ সেবন করা যাবে। এতে করে অল্প সময় বা কয়েক দিনের মধ্যে আপনার পায়খানা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হবে। পায়খানা স্বাভাবিক ও সহজ করতে ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, শাকসবজি, ফলমূল (বিশেষ করে পেঁপে, কলা, আমড়া), এবং পূর্ণ শস্যযুক্ত খাবার যেমন ওটস ও চিড়া মল নরম করতে সহায়ক। পাশাপাশি, দিনে পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং সকালে খালি পেটে ঈষদুষ্ণ পানি খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। দই বা প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। তাই পায়খানা সহজ করতে সুষম ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা এবং নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম করা অত্যন্ত জরুরি।
কোন ঔষধ খেলে পায়খানা হবে
কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় দ্রুত উপশম পেতে কিছু ওষুধ কার্যকর হতে পারে। যেমন, ল্যাক্সেটিভস (যেমন ল্যাকটুলোজ বা পলিথিলিন গ্লাইকোল) মল নরম করতে সাহায্য করে। এছাড়া বাল্ক ফর্মিং ল্যাক্সেটিভস (যেমন ইস্পাঘুলের ভুষি) মলের পরিমাণ বাড়িয়ে সহজে মলত্যাগে সহায়তা করে। কিছু ক্ষেত্রে স্টুল সফটেনারস বা স্টিমুল্যান্ট ল্যাক্সেটিভস ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে এগুলো ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করাই ভালো। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে নিজে থেকে ওষুধ খাওয়া উচিত নয়, বরং বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ।
পায়খানা হওয়ার জন্য ব্যবহৃত আরও কিছু সাধারণ ওষুধ আছে, তবে সেগুলো ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিচে কিছু জনপ্রিয় ওষুধের তালিকা দেওয়া হলো:
- ল্যাক্টুলোজ (Lactulose): এটি একটি ল্যাক্সেটিভ, যা মল নরম করে এবং সহজে বের হতে সাহায্য করে।
- ইস্পাঘুলের ভুষি (Psyllium Husk): এটি প্রাকৃতিক ফাইবার, যা মলকে ভলিউম বাড়িয়ে সহজে মলত্যাগে সহায়তা করে।
- পলিথিলিন গ্লাইকোল (Polyethylene Glycol): মলের পানি শোষণের ক্ষমতা বাড়িয়ে এটি মল নরম করে।
- ডোকুসেট সোডিয়াম (Docusate Sodium): এটি একটি স্টুল সফটেনার, যা মল নরম করতে সহায়তা করে।
- সেনা (Senna): এটি একটি হার্বাল ল্যাক্সেটিভ, যা মলত্যাগের প্রক্রিয়াকে উদ্দীপিত করে।
- বিসাকোডিল (Bisacodyl): এটি একটি স্টিমুল্যান্ট ল্যাক্সেটিভ, যা অন্ত্রে কার্যকলাপ বাড়িয়ে মলত্যাগ সহজ করে।
- ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রোক্সাইড (Magnesium Hydroxide): এটি একটি স্যালাইন ল্যাক্সেটিভ, যা দ্রুত পায়খানা করাতে সাহায্য করে।
তবে দীর্ঘদিন এই ওষুধগুলো ব্যবহার করা ঠিক নয়। পায়খানার সমস্যা যদি নিয়মিত হয়, তাহলে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের পরিবর্তন করা বেশি কার্যকর এবং নিরাপদ। এই ঔষধ গুলো সেবনের পূর্বে অবশী ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
কি কি কারণে পায়খানা সমস্যা শুরু হয়?
আমাদের অনেক অজানা ভুলের কারণেও নিয়মিত পায়খানা না হওয়ার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এই বিষয়ে জানা থাকলে খুব সহজেই সমাধান পাওয়া যাবে। অনিয়মিত খাবার, শাক-সবজি না খাওয়া এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এর মাধ্যমেও কোষ্ঠকাঠিন্য শুরু হয়। আর এই কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেই আমাদের পায়খানা না হওয়ার সমস্যা শুরু হয়ে যায়।
- পানি কম পান করার ফলে শরীরে পানির অভাব হয়, যা মল শক্ত হয়ে পায়খানার সমস্যা সৃষ্টি করে।
- ফাইবারযুক্ত খাবার, যেমন শাকসবজি ও ফলমূল কম খেলে মলত্যাগের প্রক্রিয়া ধীরগতিতে হয়।
- নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম না করা বা বসে থাকার অভ্যাস কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ায়।
- মানসিক চাপ ও উদ্বেগ অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত করে পায়খানা কঠিন করে তোলে।
- কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যেমন আয়রন ট্যাবলেট বা ব্যথানাশক, মলত্যাগে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার সহজ উপায়
যদি কোনো ভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা যায় তাহলে খুব সহজেই পায়খানা না হওয়ার সমস্যার সমাধান হবে। আর যদি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেই যায়, তাহলে অনেক ঔষধ খেয়েও কোনো কাজ নাও হতে পারে। তাই কি কি করলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হবে বা আমাদের প্রাতাহিক জীবনে কি কি মেনে চলতে হবে এগুলো জানা উচিৎ। তাহলে হয়তো খুব দ্রুত কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে এবং পায়খানা সমস্যার সমাধান হবে।
- পানি ও আঁশযুক্ত খাবার খান: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার, যেমন গোটা শস্য, শাকসবজি, বেল, পেঁপে, কলা ইত্যাদি খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক। এগুলো মল নরম করে এবং সহজে মলত্যাগে সাহায্য করে।
- মানসিক চাপ মুক্ত রাখুন: দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ অন্ত্রের কার্যকলাপকে ধীর করে। তাই মানসিক প্রশান্তির জন্য মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা নিজের পছন্দের কাজে মন দিন।
- মল চেপে রাখবেন না: মলত্যাগের প্রয়োজন হলে কখনো তা চেপে রাখবেন না। নিয়মিত মলত্যাগের অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং শরীরকে স্বাভাবিক কার্যক্রমে অভ্যস্ত করুন।
- ব্যায়াম ও হাঁটাচলা: প্রতিদিন নিয়মিত হালকা ব্যায়াম বা অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাচলা অন্ত্রের কার্যক্রম সচল রাখে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- প্রাকৃতিক সমাধান ব্যবহার করুন: ইসবগুলের ভুষি, অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর মতো ঘরোয়া প্রতিকার কোষ্ঠকাঠিন্যের ক্ষেত্রে কার্যকর। এগুলো অন্ত্রের ভলিউম বাড়িয়ে সহজে মলত্যাগে সহায়তা করে।
- খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনুন: ফাস্ট ফুড, পিৎজা, চকলেট, ভাজাপোড়া, লাল মাংস, এবং প্রচুর চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এগুলো মল শক্ত করে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়ায়।
- ওষুধের ব্যবহার সতর্কতার সঙ্গে করুন: আয়রন বা ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট, ব্যথানাশক ওষুধ কোষ্ঠকাঠিন্যের জন্য দায়ী হতে পারে। প্রয়োজনে ওষুধ পরিবর্তন বা বিকল্প বেছে নিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- চিকিৎসকের পরামর্শ নিন: যদি এসব ঘরোয়া পদ্ধতিতে কাজ না হয়, তাহলে চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী ওষুধ সেবন করুন। তবে ল্যাক্সেটিভ ওষুধ দীর্ঘদিন ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ এতে অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে।
কি কি ফল খেলে পায়খানা নরম হয়?
ফল খাওয়ার উপর নির্ভর করেও পায়খানা সমস্যার সমাধান পাওয়া যেতে পারে। পায়খানা নরম করতে কিছু ফল বিশেষভাবে কার্যকর। ফাইবার ও পানিতে ভরপুর পেঁপে, কমলা, আমড়া, এবং কলা হজমশক্তি বাড়ায় এবং অন্ত্রের কার্যক্রম সক্রিয় রাখে। এছাড়া আপেল, বিশেষত খোসাসহ খেলে, এবং নাশপাতি মলে ভলিউম যোগ করে মলত্যাগ সহজ করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ফল খাওয়া কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে এবং অন্ত্রের সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
এই কয়েকটি পদ্ধতিতে ঘরোয়া ভাবে বা ঔষধ এর মাধ্যমে পায়খানা ক্লিয়ার হতে পারে। দীর্ঘদিন পায়খানা ক্লিয়ার হওয়ার ঔষধ সেবন করলেও সমস্যা হতে পারে। যার কারণে সব সময় ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। এছাড়া ফাইবার সমৃদ্ধ বিভিন্ন ফল যেমন আপেল, নাশপাতি, কমলা ইত্যাদি ফলমূল খাবেন। বিভিন্ন প্রকার শাক সবজি রেগুলার খেতে হবে। সব সময় পান পান করার ফলে খুব সহজেই পায়খানা হবে। আর ঔষধ হিসেবে ল্যাক্টুলোজ খেতে পারেন।