শবে মেরাজের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মান কতটুকু তা মুসলিম জাতির সামনে তুলে ধরে। কেননা এই রাতে মাসজিদুল আকসায় সকল নবী রাসুল একত্রে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেছিলেন। আর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেই জামাতে ইমাম হয়ে ইমামতি করেছিলেন।
উম্মত হিসাবে প্রিয় নবী সাঃ এর সম্মানের এই রাতকে স্মরণীয় করে রাখতে অনেকেই কিছু আমল করতে চায়। তাদের জন্য আজকের এই পোস্টে আমরা জানাবো শবে মেরাজ উপলক্ষে কোন বিশেষ আমল আছে কিনা। এছাড়াও জানতে পারবেন শবে মেরাজের নামাজ পড়ার নিয়ম কি। তাহলে চলুন এই সকল বিষয় নিয়ে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
শবে মেরাজের নামাজ পড়ার নিয়ম
শবে মেরাজ মহাসত্য একটি ঘটনা যা অস্বীকার করার কোন পথ নেই। শবে মেরাজের সঠিক তারিখ হাদিসে উল্লেখ না থাকায় ধারণা করা হয় হিজরতের দু’বছর আগে ইংরেজি ৬২০ খ্রিস্টাব্দের ৮ই মার্চ শবে মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল। সেই হিসেবে অনুযায়ী আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারি রোজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত হলো শবে মেরাজের রাত।
যার কারণে অনেকেই কিভাবে শবে মেরাজের নামাজ আদায় করতে হয় সেই একটা দুইটা তিনটা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে। শবে মেরাজের নির্দিষ্ট কোন নামাজ নেই। এই রাতে মুসলিম জাতির জন্য উপহারস্বরূপ আল্লাহ পাক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান নাযিল করেছেন। আর এই নামাজকেই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আঁকড়ে ধরতে বলেছেন। তবে আপনি এ রাতকে স্মরণীয় করে রাখতে দুই রাকাত দুই রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।
এই নফল নামাজ আপনি চাইলে এশার ফরজ ও সুন্নত নামাজের পর পড়তে পারেন। এই নফল নামাজের জন্য সাধারণ নফল নামাজের নিয়ত করতে হবে। এরপর সাধারণ নফল নামাজের মত প্রথমে সুরা ফাতিহা ও এর সাথে একটি অন্য যে কোনো সূরা বা আয়াত মিলিয়ে পড়তে হবে। তারপর রুকু এবং সেজদা করে প্রথম রাকাত শেষ করতে হবে।
অতঃপর পূর্বের নেয় দ্বিতীয় রাকাত নামাজ আদায় করে শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দরুদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পাঠ করতে হবে। এরপর প্রথমের ডান এবং পরে বাম উভয়দিকে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে দুই রাকাত নফল নামাজ শেষ করতে হবে। অতঃপর আপনি চাইলে নামাজ শেষে হাত তুলে আল্লাহর কাছে নিজে এবং অপরের জন্য দোয়া করতে পারেন।
শবে মেরাজের নামাজ
শবে মেরাজ সংঘটিত হওয়ার পর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায় ১০ বছর জীবিত ছিলেন। এ সময় তিনি বা সাহাবায়ে কেরাম কেউ শবে মেরাজের জন্য আলাদা কোন নামাজ আদায় করেননি। তাই বলা যায় শবে মেরাজ উপলক্ষে কোন ফজিলতপূর্ণ আলাদা নামাজ নেই। তবে আপনি চাইলে শবে মেরাজের রাতে প্রতিদিনের তুলনায় বেশি নফল নামাজ আদায় করতে পারেন।
শবে মেরাজের নামাজের নিয়ত
মেরাজের রাত্রে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাত আসমান ও সিদ্রাতুল মুনতাহা ভেদ করে মহান আল্লাহপাকের সাক্ষাৎ লাভ করেন। অন্য কোন নবী রাসূল এই সম্মান পায়নি। অনেকেই এই সম্মানিত রাতকে স্মরণীয় করে রাখতে শবে মেরাজের নফল নামাজের নিয়ত জানতে চায়। শবে মেরাজের নির্দিষ্ট কোন নামাজ না থাকায় সাধারণ নফল নামাজের নিয়ত করতে হবে।
দুই রাকাত নফল নামাজের আরবি নিয়তঃ
নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিয়া-লিল্লাহি তা’আলা রাকাআতি ছালাতিল নফলি মোতাওয়াজ্জিয়ান ইলা জিহাতিল কা বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।
এছাড়াও আপনি চাইলে এভাবে বাংলাতেও নিয়ত করতে পারেন। আমি কিবলামুখী হয়ে আল্লাহর উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায়ের নিয়ত করতেছি আল্লাহু আকবার।
শবে মেরাজের এর নামাজ কত রাকাত
শবে মেরাজের রাতে এশার সালাত আদায়ের পর আপনি চাইলে নফল নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে খেয়াল রাখতে হবে এই নামাজের নিয়ত যেন শবে মেরাজ উপলক্ষে না হয়। কেননা শবে মেরাজের কোন নির্দিষ্ট নামাজ নেই তাই আপনি শবে মেরাজ উপলক্ষে নামাজের নিয়ত করলে তা বেদাত হয়ে যাবে। এছাড়া সাধারণ নফল নামাজের নিয়ত করে আপনি দুই রাকাত করে যত রাকাত ইচ্ছা নামাজ আদায় করতে পারবেন।
শবে মেরাজের রাতে কি কি নামাজ পড়তে হয়?
প্রতিবছর একদিন দিবাগত রাতে শবে মেরাজ হওয়ায় শবে মেরাজ সম্পর্কে তেমন ধারণা থাকে না। তাই অনেকেই কি কি নামাজ পড়তে হয় শবে মেরাজের রাতে তা জানতে চায়। শবে মেরাজের রাতে এশার সালাত অবশ্যই আদায় করতে হবে কেননা এটি ফরজ বাদ দেওয়ার কোন উপায় নেই। এরপর আপনি চাইলে দুই রাকাত করে নফল নামাজ আদায় করতে পারেন না করলেও কোন গুনা বা পাপ হবে না।
শবে মেরাজের নামাজ কি সুন্নত না নফল?
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ যে কাজগুলো করতেন সেগুলোকেই সুন্নত বলা হয়। সুন্নত নামাজের ক্ষেত্রে যে নামাজ গুলোর জন্য রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়া গেছে সেগুলোকে বোঝায়। শবে মেরাজ উপলক্ষে যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাঃ এর কাছ থেকে কোন নামাজের নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। তাই শবে মেরাজের রাতে কোন আলাদা সুন্নত নামাজ পড়া যাবে না।
নফল নামাজকে অতিরিক্ত ইবাদত হিসেবে ধরা হয়। নফল নামাজের কোন সীমাবদ্ধতা নেই আপনার যত ইচ্ছা তত রাকাত পড়তে পারবেন। আপনি চাইলে শবে মেরাজ উপলক্ষে এই অতিরিক্ত ইবাদত অর্থাৎ নফল নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে এই নফল নামাজ মেরাজ উপলক্ষে নয় বরং আল্লাহকে খুশি করার জন্য পড়তে হবে।
শেষ কথা
শবে মেরাজ নিয়ে আমাদের সমাজে ইতিমধ্যে অনেক বেদাত ছড়িয়ে গেছে। তাই আজকের পোস্টে শবে মেরাজের নামাজ পড়ার নিয়ম সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। যা আমাদের বেদাত থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সঠিক পথ চেনার এবং বিদআত থেকে বাঁচার তৌফিক দান করুন। আমিন।