টাইফয়েড জ্বর মূলত ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ যা দূষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে ছরিয়ে পরে। প্রতি বছর ভারতে লাখ লাখ মানুষ টাইফয়েডে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই কারনেই আক্রান্ত হবার আগেই টাইফয়েড টিকা গ্রহন করা জরুরি।
বর্তমানে টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচতে ভারত সরকার এবং বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল যৌথভাবে টাইফয়েড ভ্যাকসিন প্রদান করছে, যাতে করে ভারতের সাধারণ জনগন টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হওয়া থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারে।
কিন্তু বর্তমানে অনেকেই বলছে যে তাঁরা জানেন না যে কিভাবে ভারতে টাইফয়েড টিকা নিবন্ধন করতে হয়! আজকের এই লেখায় আমি আপনাদের সাথে টাইফয়েড টিকা নিবন্ধন কিভাবে করতে হবে এবং কোন পক্রিয়ায় টাইফয়েড ভ্যাকসিন গ্রহন করতে হবে সেই সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।
টাইফয়েড টিকা কাদের জন্য প্রয়োজন?
টাইফয়েড টিকা গ্রহনের জন্য নিবন্ধন করার আগে আপনাকে জানতে হবে আপনার টাইফয়েড টিকা গ্রহন করা প্রয়োজন কি না। যদি প্রয়োজন না হয় তাহলে আপনার টাইফয়েড টিকা নিবন্ধন করার কোন প্রয়োজন নেই।
আপনি যদি এমন কোন ব্যাক্তি হয়ে থাকেন যিনি প্রায়ই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় (টাইফয়েড জ্বর বেশী হয় এমন এলাকা) ভ্রমন করে থাকেন ,অথবা আপনি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যাননি কিন্তু আপনি টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত এমন কারও সংস্পর্শে এসেছিলেন , ,অথবা আপনি যদি সামরিক কর্মী হয়ে থাকেন ,অথবা আপনার যদি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম হয়ে থাকে তাহলেই আপনার টাইফয়েড টিকা গ্রহনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।
টাইফয়েড ভ্যাকসিনের ধরন সম্পর্কে ধারনা
এখন পর্যন্ত ভারতে বয়স বিবেচনা করে তিন ধরনের টাইফয়েডের ভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। আমি এখানে আপনার বুঝার সুবিধার জন্য তিনটি ভ্যাকসিনের নাম এবং কোনটা কোন বয়সের জন্য উপযোগী সেই ব্যপারে সংক্ষিপ্ত আকারে তথ্য তুলে ধরছি।
- Typhoid Conjugate Vaccine (TCV): একবারের ডোজেই দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা দেয় এবং ৬ মাস বয়স থেকে শিশুদের দেওয়া যায়।
- Vi Capsular Polysaccharide Vaccine: এই টিকা দুই বছরের বেশি বয়সীদের জন্য এবং সীমিত সময়ের সুরক্ষা দেয়।
- Ty21a Oral Vaccine: এটি মুখে খাওয়ার ক্যাপসুল আকারে দেওয়া হয়, তবে সব বয়সীদের জন্য নয়।
ভারতে টাইফয়েড জ্বরের টিকা কোথায় পাওয়া যায়?
ভারতে টাইফয়েড জ্বরের ভ্যাকসিন (টিকা) সাধারণত পাওয়া যায় সরকারি ও প্রাইভেট উভয় স্বাস্থ্য সেবা (হসপিটাল) কেন্দ্রে।সরকারি হাসপাতালে শুধুমাত্র শিশুদের জন্য অনেক সময় এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়ে থাকে। তবে প্রাইভেট হাসপাতালে এটি শিশুদের জন্য বিনামূল্যে প্রদান করা হয় কি না সেই ব্যাপারে কোন তথ্য পাওয়া যায় নি।
শিশু ছাড়া অন্য বয়সীদের ক্ষেত্রে সরকারি হাসপাতাল এবং প্রাইভেট হাসপাতাল ও অনুমোদিত ক্লিনিকে নির্দিষ্ট ফি প্রদানের মাধ্যমে টাইফয়েড টিকা রেজিস্ট্রেশন করে টিকা নেওয়া যায়।
ভারতে টাইফয়েড জ্বরের টিকা নিবন্ধন করার সঠিক পদ্ধতি
আপনি যদি ভারতে টাইফয়েডর টিকা নিবন্ধন করতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে একজন ডাক্তারের কাছে থেকে ছারপত্র নিতে হবে। উক্ত ডাক্তার যদি মনে করেন যে আপনার টাইফয়েডর টিকা নেওয়া উচিত তাহলেই কেবল ডাক্তার আপনাকে ছারপত্র দিবে এবং আপনি সেই ছারপত্র দেখিয়ে নির্দিষ্ট সরকারী হাসপাতাল এবং প্রাইভেট হাসপাতাল ও অনুমোদিত ক্লিনিকে নির্দিষ্ট ফি প্রদানের মাধ্যমে টাইফয়েড জ্বরের টিকা গ্রহন করতে পারবেন।
ভারতে টাইফয়েড জ্বরের টিকা নিবন্ধনের সঠিক ধাপসমূহ কি কি?
ভারতে টাইফয়েডর টিকা নিবন্ধন করার জন্য প্রথমে আপনাকে একজন ডাক্তারের কাছে থেকে ছারপত্র নিতে হবে। এরপরে সেই ছারপত্র ব্যবহার করে নির্দিষ্ট সরকারী হাসপাতাল এবং প্রাইভেট হাসপাতাল ও অনুমোদিত ক্লিনিকে টিকা গ্রহন করার জন্য নিবন্ধন করতে হবে। টিকা নিবন্ধন করার জন্য আপনার আপনার আধার কার্ডের প্রয়োজন হবে। এর জন্য আপনার নিজের আধার কার্ডের ফটোকপি এবং মূল কপি সাথে নিয়ে যেতে হবে।
টিকা গ্রহনের জন্য নিবন্ধন করার পর আপনাকে টাইফয়েডর টিকা প্রদান করার একটি তারিখ এবং সময় প্রদান করা হবে। আপনাকে সেই নির্দিষ্ট তারিখে উপস্থিথ হয়ে টাইফয়েডর ভ্যাকসিন গ্রহন করতে হবে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর অবশ্যই আপনার টিকা সনদ নিয়ে নিবেন যেন আপনি সেটা আপনার প্রয়োজন অনুসারে ব্যবহার করতে পারেন।
অনলাইনে টাইফয়েড জ্বরের টিকা রেজিস্ট্রেশন করা যাবে কি?
না আপনি ভারতে টাইফয়েড জ্বরের টিকা গ্রহনের রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন না। তবে ভারত সরকার চেষ্টা করছে যেন তাদের সকল নাগরিক অনলাইনে ঘরে বসেই টাইফয়েড জ্বরের টিকা গ্রহনের জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে পারে। আশা করা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই এই সুবিধা চালু করা হবে।
টাইফয়েড জ্বরের টিকা নেওয়ার পূর্বে নিচের সতর্কতা মেনে চলুন
- টিকা নেওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন যে আপনার টাইফয়েড জ্বরের টিকা গ্রহন করা উচিত হবে কি না।
- শিশুদের ক্ষেত্রে শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী টিকা দিন।
- টিকা নেওয়ার পর হালকা জ্বর বা ব্যথা হতে পারে, যা কয়েক দিনের মধ্যে সেরে যায়।তাই এটার জন্য ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই।
- টিকা গ্রহনের পর গুরুতর সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করুন।
শেষ কথা
টাইফয়েড জ্বর একটি গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা যা দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষকে আক্রান্ত করে। এই রোগ থেকে বাঁচার সবচেয়ে কার্যকর উপায় হলো সময়মতো টাইফয়েড টিকা গ্রহণ করা।
ভারতে বর্তমানে সরকারি ও প্রাইভেট উভয় হাসপাতালেই টাইফয়েড টিকা নিবন্ধন করার সুযোগ রয়েছে। তবে টিকা নেওয়ার আগে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি এবং নিবন্ধনের সময় আধার কার্ডসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঙ্গে রাখতে হবে।
যদিও অনলাইনে টাইফয়েড টিকা রেজিস্ট্রেশন করার সুযোগ এখনো চালু হয়নি, শিগগিরই ভারত সরকার এই সুবিধা চালু করার পরিকল্পনা করছে।
তাই দেরি না করে আজই আপনার নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যোগাযোগ করে প্রয়োজন হলে টাইফয়েড ভ্যাকসিন গ্রহণ করুন এবং নিজে ও আপনার পরিবারকে টাইফয়েড জ্বরের ঝুঁকি থেকে সুরক্ষিত রাখুন।


