মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সম্মান শবে মেরাজ সমগ্র মুসলিম জাতির সামনে তুলে ধরে। এই রাত্রে প্রিয় নবী সাঃ মহান আল্লাহর পাকের সাথে বাক্যলাপ করেন এবং এই রাতেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আমাদের উপর নেয়ামত স্বরূপ নাযিল হয়।
আল্লাহপাক বলেছেন, যখন তোমাদের নিকট আল্লাহর কোন নিয়ামত আসে তখন তোমরা তা উদযাপন কর বা শুকরিয়া আদায় কর। তাই অনেকেই রোজা রেখে শুকরিয়া আদায় করবে ভেবে শবে মেরাজের রোজা কত তারিখে তা জানতে চায়। নিচে শবে মেরাজের রোজা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
শবে মেরাজের রোজা কত তারিখে
প্রিয় নবী সাঃ হিজরতের পূর্বে আল্লাহ পাকের হুকুমে প্রথমে মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাসে গমন করেন। অতঃপর বিশেষ বাহনের মাধ্যমে সিদরাতুল মুনতাহা ভেদ করে মহান আল্লাহ পাকের সাক্ষাৎ লাভ করেন যা অনেক নবী রাসূল চেয়েও পায়নি।
শবে মেরাজের ঘটনা কত তারিখে ঘটেছিল তা কুরআন বা হাদিসে সুস্পষ্ট ভাবে উল্লেখিত নয়। তবে ইমাম ইবনুল জাওযীর মতে নবুয়তের আগে আরবি রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল। তার এই মত অনুসারে বাংলাদেশে ২৭ তারিখ শবে মেরাজ পালিত হয়ে আসছে। তাই আপনি চাইলে এই দিন রোজা রাখতে পারেন।
শবে মেরাজ রোজা কবে ২০২৪
বিভিন্ন ইতিহাসবিদদের মতে হিজরতের দু’বছর আগে ইংরেজি ৬২০ খ্রিস্টাব্দের ৮ই মার্চ শবে মেরাজ সংঘটিত হয়েছিল। সেই হিসেবে অনুযায়ী আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারি রোজ বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত হলো শবে মেরাজের রাত। তাই অনেকেই মেরাজের রোজা কবে তা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছে।
মেরাজের রাতে আল্লাহ পাক উপহারস্বরূপ আমাদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ দিয়েছেন। শবে মেরাজ উপলক্ষে প্রিয় নবী সাঃ বা সাহাবায়ে কেরামের কেউ শবে মেরাজ উপলক্ষে কোন নামাজ বা রোজা পালন করেনি। তবে আপনি চাইলে এই দিন সহ যে কোনদিন নফল রোজা রাখতে পারেন।
শবে মেরাজ রোজা কয়টি
মেরাজ উপলক্ষে যেহেতু কোন রোজা রাখার কথা কুরআন হাদিসে বলা হয়নি। সেহেতু কেউ যদি মেরাজ উপলক্ষে রোজা রাখে তা বেদাত হয়ে যেতে পারে। তবে কেউ যদি মহান আল্লাহকে খুশি করার জন্য নফল রোজা রাখতে চায় তাহলে রাখতে পারেন।
রজব মাস রমজান মাসের প্রস্তুতি নেওয়ার মাস হওয়ায় বেশি বেশি রোজা রাখা উচিত। কেননা নবী করীম সাঃ বলেছেন “কোন ব্যক্তি রজব মাস আসলো কিন্তু ক্ষেত চাষ করল না, শাবান মাস আসলো কিন্তু ক্ষেত নিড়ানী দিল না আগাছা পরিষ্কার করল না, সে তার ফসল রমজান মাসে ঘরে তুলতে পারবে না “
শবে মেরাজের রোজা রাখা যাবে কি?
শবে মেরাজ উপলক্ষে কোন রোজা রাখার নির্দেশনা হযরত মুহাম্মদ সাঃ দেননি। সুতরাং শবে মেরাজ উপলক্ষে কোন রোজা রাখা যাবে না।তবে আপনি চাইলে রজব মাসের যে কোন দিন নফল রোজা রাখতে পারেন। রাসূলুল্লাহ সাঃ নিজেও প্রতি সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন।
তিনি সাঃ সোমবার ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখার জন্য আমাদেরকেও উৎসাহিত করেছেন। এছাড়াও এই রোজার ফজিলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেছেন ‘যে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একদিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে তার থেকে ১০০ বছরের দূরত্বে সরিয়ে রাখবেন’।
শবে মেরাজ রোজা রাখার নিয়ম
মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার থেকে বিরত থাকাকে রোজা বলা হয়। ফজরের আযান হওয়ার আগে খাবার খেয়ে সাধারণ নফল রোজার নিয়ত করতে হবে। অতঃপর মাগরিবের আজান হলে ইফতারের মাধ্যমে রোজা বা সাওম শেষ করতে হবে।
মেরাজের রোজা রাখার নিয়ত
সাধারণত নফল রোজার নিয়ত দিনে পানাহার করার আগে যেকোনো সময় করা যাবে। সেহরি খাওয়ার পর আমি মহান আল্লাহকে খুশি করার জন্য নফল রোজা রাখার নিয়ত করলাম। এইভাবে বাংলায় নিয়ত করলেও রোজা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। তবে যারা আরবিতে রোজার নিয়ত করতে চান তাদের জন্য নিচে রোজার নিয়ত দেওয়া হলো।
রোজার আরবি নিয়তের বাংলা উচ্চারণ :
নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
শেষ কথা
আপনারা যারা শবে মেরাজের রোজা কত তারিখে তা জানতে চাচ্ছিলেন আশা করি তা জানতে পেরেছেন। এছাড়াও শবে মেরাজের রোজা নিয়ে অনেক বেদাত আমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে। যে সকল বিদআত থেকে আমাদেরকে বেঁচে থাকতে হবে।