শীতের মিষ্টি রোদে যখন বেশিরভাগ কৃষক ধান-পাট নিয়ে ব্যস্ত থাকেন, তখন কিছু চৌকস কৃষক শীতকালীন তরমুজ চাষ করে লাখ টাকা আয় করছেন। বাজারে শীতের সময় তরমুজের চাহিদা থাকে অনেক বেশি, দামও থাকে আকর্ষণীয়। আপনিও যদি সঠিক শীতকালীন তরমুজ চাষ পদ্ধতি জেনে নেন, তাহলে এক বিঘা জমিতে ২-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ করা সম্ভব। চলুন জেনে নিই পুরো প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে।
আরও জানতে পারেনঃ ১০ টি শীতকালীন ফলের নাম ও বিস্তারিত
শীতকালীন তরমুজ চাষ পদ্ধতি: খরচ ও লাভের হিসাব (প্রতি বিঘা)
- মোট খরচ: ৭০,০০০-৯০,০০০ টাকা
- গড় ফলন: ৮০০-১২০০ মণ
- বিক্রয় মূল্য: ২.৫-৩.৫ লাখ টাকা
- নীট লাভ: ১.৮-২.৫ লাখ টাকা
শীতকালে তরমুজ চাষ করে অনেক কৃষক এখন লাখপতি হয়েছেন। আপনিও চাইলে এই শীতকালীন তরমুজ চাষ পদ্ধতি অনুসরণ করে সাফল্য পেতে পারেন।

জমি নির্বাচন ও প্রস্তুতি
শীতকালীন তরমুজের জন্য উঁচু, বেলে-দোআঁশ বা পলি মাটি সবচেয়ে ভালো হয়। জমিতে যেন পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রতি বিঘায় ১০-১২ টন পচা গোবর, ১০০ কেজি ছাই, ৫০ কেজি টিএসপি, ৪০ কেজি এমওপি ও ৩০ কেজি জিপসাম দিয়ে জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিতে হবে। তারপর ৮-১০ ফুট চওড়া বেড তৈরি করতে হবে।
আরও জানতে পারেনঃ ১০ টি শীতকালীন সবজির নাম
উপযুক্ত জাত নির্বাচন
শীতকালে সাফল্য পেতে হলে হাইব্রিড ও টলারেন্ট জাত বেছে নিতে হবে। জনপ্রিয় জাতগুলো হলো:
- ব্ল্যাক জায়েন্ট
- গোল্ডেন কিং
- ওয়ান্ডার বয়
- সাকাতা-৩
- ড্রাগন কিং
- রেড কিং
এই জাতগুলো শীত সহ্য করতে পারে এবং ফল মিষ্টি ও বড় হয়।
বীজ বপনের সঠিক সময় ও পদ্ধতি
শীতকালীন তরমুজ চাষ পদ্ধতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো বীজ বপনের সময়। কার্তিক মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত (অক্টোবরের শেষ থেকে নভেম্বরের মাঝামাঝি) বীজ বপন করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়।
প্রতি গর্তে ২-৩টি বীজ ২-৩ সেন্টিমিটার গভীরে বপন করতে হবে। গর্ত থেকে গর্তের দূরত্ব ২ মিটার এবং লাইন থেকে লাইন ৩-৪ মিটার রাখতে হবে।
আরও জানতে পারেনঃ ১০ টি শীতকালীন ফলের নাম ও বিস্তারিত
সেচ ও আগাছা দমন
শীতে বেশি ঠান্ডা পড়লে সকালে হালকা গরম পানি দিয়ে সেচ দিলে চারা ভালো থাকে। মালচিং পেপার ব্যবহার করলে আগাছা কম হয় এবং মাটির তাপমাত্রা ঠিক থাকে।
রোগ ও পোকা দমন
শীতকালে তরমুজে মিলিবাগ, জাব পোকা ও ফল উইভিলের আক্রমণ বেশি হয়। প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি ইমিডাক্লোরোপ্রিড বা ২ গ্রাম থাইয়ামিথক্সাম মিশিয়ে স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ফল ছোট থাকতে ফলের ব্যাগিং করে দিলে পোকার আক্রমণ অনেক কমে।
ফল সংগ্রহ ও বাজারজাত
বপনের ৭০-৮০ দিনের মধ্যে ফল পাকে। একটি গাছে ৪-৬টি ফল রাখলে প্রতিটি ফলের ওজন ৬-১২ কেজি পর্যন্ত হয়। বর্তমানে পাইকারি বাজারে ৬০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।


