আজ শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে হঠাৎ করে পুরো বাংলাদেশ কেঁপে ওঠে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, ময়মনসিংহ – কোনো বিভাগই বাদ পড়েনি। এমনকি পড়শি দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা ও আশপাশের এলাকাতেও কম্পন অনুভূত হয়েছে।
ভূমিকম্পের মাত্রা ও কেন্দ্রস্থল
- বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর: রিখটার স্কেলে ৫.৭
- মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ (USGS): ৫.৫
- ভারতীয় সূত্র ও অন্যান্য: ৫.২ থেকে ৫.৬
- উৎপত্তিস্থল: নরসিংদী জেলার মাধবদী, ঘোড়াশাল থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে

ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশে শক্তিশালী ভূমিকম্প
আরও জানতে পারেনঃ শীতকালীন তরমুজ চাষ পদ্ধতি: লাভজনক ও সহজ উপায়ে
কোথায় কোথায় কম্পন অনুভূত হয়েছে?
ঢাকা, নরসিংদী, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রাজশাহী, নাটোর, জয়পুরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোণা, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ – মোট ৫০টির বেশি জেলায় মানুষ কাঁপুনি অনুভব করেছেন।
ঢাকায় আতঙ্কের মুহূর্ত
সকালের অফিস টাইম। হঠাৎ ভবনগুলো দুলতে শুরু করে। মিরপুর, উত্তরা, বনানী, গুলশান, বারিধারা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, পুরান ঢাকা, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা – সব জায়গা থেকে মানুষ ছুটে রাস্তায় নেমে আসেন। উঁচু ভবনে থাকা লোকজন বলছেন, “মনে হচ্ছিল ভবনটা ভেঙে পড়বে”। কম্পন চলেছে ৮ থেকে ১২ সেকেন্ড। অনেকে সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নামতে গিয়ে আহত হয়েছেন বলে প্রাথমিক খবর পাওয়া গেছে।
নরসিংদীতে সবচেয়ে বেশি ঝাঁকুনি
কেন্দ্রের কাছাকাছি হওয়ায় মাধবদী, মনোহরদী, শিবপুর, বেলাব, রায়পুরা এলাকায় ঝাঁকুনি ছিল সবচেয়ে তীব্র।
- কিছু পুরোনো বাড়ির দেয়ালে চিড় ধরেছে
- পলেস্তারা খসে পড়েছে
- দোকানের মালামাল মাটিতে পড়ে গেছে তবে এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধসে পড়া বা হতাহতের খবর নেই।
ভারতেও কেঁপে উঠেছে কলকাতা
এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা ও অন্যান্য ভারতীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর-দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদীয়া, মুর্শিদাবাদে মানুষ ভূমিকম্প অনুভব করেছেন। কলকাতার অনেকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছেন।
বাংলাদেশ কেন ভূমিকম্পপ্রবণ?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ দুটি বড় টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত:
- ইন্দো-অস্ট্রেলিয়ান প্লেট
- ইউরেশিয়ান প্লেট এই দুই প্লেটের ঠোকাঠুকিতে ভূমিকম্প হয়। গত ১০০ বছরে বাংলাদেশে ৫.০+ মাত্রার ৬৫টির বেশি ভূমিকম্প রেকর্ড করা হয়েছে।
আরও জানতে পারেনঃ কলকাতা টু মুম্বাই বিমান ভাড়া (সর্বশেষ তথ্য)
ঢাকার ভবনগুলো কতটা নিরাপদ?
ঢাকা শহরে ৩ লাখের বেশি ভবন আছে, যার অধিকাংশই ভূমিকম্প সহনশীল নয়। রাজউকের তথ্য অনুযায়ী:
- মাত্র ১৫-২০% ভবন বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি
- পুরোনো ঢাকার বেশিরভাগ ভবন ৪.৫ মাত্রার বেশি সহ্য করতে পারবে না আজকের ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্প যেন সবাইকে সতর্ক করল।
ভূমিকম্পের সময় কী করবেন? (গোল্ডেন রুল)
- Drop – মাটিতে শুয়ে পড়ুন
- Cover – মজবুত টেবিলের নিচে ঢুকুন
- Hold On – টেবিলের পা শক্ত করে ধরে থাকুন বাইরে থাকলে খোলা জায়গায় চলে যান, বিদ্যুৎ তার ও ভবন থেকে দূরে থাকুন।
বর্তমান পরিস্থিতি
- কোনো সুনামি সতর্কতা জারি হয়নি
- ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, পুলিশ মাঠে নেমেছে
- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর হটলাইন চালু করেছে: ১০৯০
- সরকার জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে
এই ভূমিকম্প আমাদের সবাইকে মনে করিয়ে দিল – প্রকৃতির সামনে আমরা কতটা অসহায়। এখনই সময় ভবনের মান যাচাই করার, প্রস্তুতি নেওয়ার।



