জয়নুল আবেদীন সম্পর্কে ১০ টি বাক্য ২০২৫ (আপডেট তথ্য)

জয়নুল আবেদীন সম্পর্কে ১০ টি বাক্য অনলাইনে অনুসন্ধান করছেন? তাহলে এই আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। আজকাল পরীক্ষা, প্রবন্ধ লেখা বা সাধারণ জ্ঞানের জন্য জয়নুল আবেদীনের মতো বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের উপর কয়েকটা বাক্য লিখতে বলা হয়ে থাকে। কিন্তু অনেকেই সঠিক তথ্য সাজিয়ে লিখতে পারেন না। তাই আপনাদের সুবিধার কথা ভেবে এই আর্টিকেলে আমরা জয়নুল আবেদীন সম্পর্কে ১০ টি বাক্য জানানোর পাশাপাশি ৫টি বাক্য, বিস্তারিত জীবনী ও তাঁর অবদান নিয়ে আলোচনা করব।

জয়নুল আবেদীন সম্পর্কে ১০ টি বাক্য

নিচে জয়নুল আবেদীন সম্পর্কে ১০ টি বাক্য উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো তাঁর জীবন, কাজ ওঅবদানের সারাংশ দেয়:

  • ১. জয়নুল আবেদীন বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী, যিনি ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। 
  • ২. তিনি বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পের পিতা হিসেবে পরিচিত ও ‘শিল্পাচার্য’ উপাধি লাভ করেন। 
  • ৩. ১৯৪৩ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষের চিত্রগুলো তাঁকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দেয়।
  •  ৪. জয়নুল আবেদীন ১৯৪৮ সালে ঢাকায় চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন, যা পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টস ফ্যাকাল্টি হয়। 
  • ৫. তাঁর শিল্পকর্মে গ্রামীণ জীবন, প্রকৃতি ওমানবীয় সংগ্রামের চিত্রণ প্রধান। 
  • ৬. ১৯৭৫ সালে তিনি সোনারগাঁওয়ে লোকশিল্প জাদুঘর ও ময়মনসিংহে জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করেন। 
  • ৭. জয়নুল আবেদীনের বিখ্যাত চিত্রকর্মগুলোর মধ্যে ‘দুর্ভিক্ষ সিরিজ’, ‘নবান্ন’ ও ‘সাঁওতাল নারী’ উল্লেখযোগ্য। 
  • ৮. তিনি ভাষা আন্দোলন ওবাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সাংস্কৃতিক ভূমিকা পালন করেন।
  •  ৯. ১৯৭৬ সালের ২৮ মে তিনি ঢাকায় মারা যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সমাহিত হন।
  •  ১০. তাঁর অবদানের জন্য ২০০৯ সালে পার্কুর্যে একটি গ্রহাণুকে ‘আবেদীন’ নামকরণ করা হয়।

জয়নুল আবেদীন সম্পর্কে ৫ টি বাক্য

যদি আপনার সংক্ষিপ্ত তথ্য দরকার হয়, তাহলে নিচে জয়নুল আবেদীন সম্পর্কে ৫ টি বাক্য উল্লেখ করা হয়েছে:

  • ১. জয়নুল আবেদীন বাংলাদেশের শিল্প জগতের পথপ্রদর্শক, যিনি ১৯১৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন ও১৯৭৬ সালে মারা যান। 
  • ২. তাঁর দুর্ভিক্ষের চিত্রসিরিজ বাংলার মানবীয় দুর্দশাকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরে। 
  • ৩. তিনি ঢাকায় চারুকলা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন ও অনেক শিল্পীকে অনুপ্রাণিত করেন। 
  • ৪. জয়নুল আবেদীনের শিল্পে বাঙালি ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মিশ্রণ দেখা যায়। 
  • ৫. তাঁর উত্তরাধিকার হিসেবে লোকশিল্প জাদুঘর ও সংগ্রহশালা আজও বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সম্পদ।
  • এই ৫ টি বাক্য জয়নুল আবেদীন সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত কিন্তু সম্পূর্ণ ধারণা দেয়, যা দ্রুত মনে রাখা সহজ।

জয়নুল আবেদীন সম্পর্কে অনুচ্ছেদ

জয়নুল আবেদীন বাংলাদেশের শিল্প জগতের এক অমর নাম। তিনি ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা তমিজউদ্দিন আহমদ পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর ছিলেন ওমা জয়নাবুন্নেছা খাতুন গৃহিণী। নয় ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার বড়। ছোটবেলা থেকেই জয়নুল আবেদীনের শিল্পের প্রতি গভীর আকর্ষণ ছিল। তিনি পাখি, ফুল, নদী, গ্রামীণ দৃশ্য আঁকতেন ওমাকে দেখাতেন। ব্রহ্মপুত্র নদীর তীরে কাটানো শৈশব তাঁর শিল্পকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। ক্লাস নাইনে পড়ার সময় তিনি বাড়ি থেকে পালিয়ে কলকাতায় চলে যান, শুধুমাত্র আর্ট স্কুল দেখার জন্য। যদিও সেবার দেখা হয়নি, কিন্তু এই ঘটনা তাঁর দৃঢ়তা প্রমাণ করে।

১৯৩৩ সালে জয়নুল আবেদীন কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টে ভর্তি হন। তাঁর মা গলার হার বিক্রি করে ভর্তির টাকা যোগাড় করেন। ১৯৩৮ সালে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতক হন ওসোনার পদক লাভ করেন। এরপর তিনি স্কুলের শিক্ষক হন। কিন্তু ইউরোপীয় ও ওরিয়েন্টাল শৈলীতে অসন্তুষ্ট হয়ে তিনি নিজস্ব ‘বাঙালি শৈলী’ গড়ে তোলেন, যাতে লোককলা, জ্যামিতিক আকার ও প্রাথমিক রং মিশে যায়। পরে তিনি লন্ডনের স্লেড স্কুল অব ফাইন আর্টে দু’বছর প্রশিক্ষণ নেন ও রিয়ালিজমের দিকে ফিরে আসেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানে (বর্তমান বাংলাদেশ) চলে আসেন। সেখানে কোনো আর্ট প্রতিষ্ঠান না থাকায় তিনি ১৯৪৮ সালে পুরান ঢাকার জনসন রোডে গভর্নমেন্ট আর্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন। এটি পরে পূর্ব পাকিস্তান চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় হয় ও১৯৭১ সালে বাংলাদেশ চারুকলা মহাবিদ্যালয় নামে পরিচিত হয়। তিনি ১৯৪৮ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত এর অধ্যক্ষ ছিলেন ওঅনেক শিল্পীকে গড়ে তোলেন, যেমন মনিরুল ইসলাম, মোহাম্মদ কিবরিয়া প্রমুখ।

জয়নুল আবেদীনের শিল্পকর্ম মানবীয় সংগ্রাম ওপ্রকৃতির সৌন্দর্যকে কেন্দ্র করে। ১৯৪৩ সালের বাংলার দুর্ভিক্ষ তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। তিনি কলকাতার রাস্তায় ঘুরে ঘুরে কঙ্কালসার মানুষ, কাক ওমৃত্যুর দৃশ্য আঁকেন। এই সিরিজ ‘ফ্যামিন স্কেচেস’ নামে বিখ্যাত হয় ও তাঁকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়। চারকোল ওসস্তা কাগজ ব্যবহার করে আঁকা এই চিত্রগুলো মানবতার অপমানকে তুলে ধরে। পরবর্তীকালে তিনি ‘নবান্ন’ (১৯৬৯), একটি ৬৫ ফুট লম্বা স্ক্রল, যা অসহযোগ আন্দোলনকে উদযাপন করে। ১৯৭০ সালে তিনি প্যালেস্টাইন শরণার্থী শিবিরে গিয়ে ৬০-৭০টি চিত্র আঁকেন ওভোলা ঘূর্ণিঝড়ের দুর্দশা চিত্রিত করেন। তাঁর অন্যান্য কাজে ‘রেবেল কাউ’, ‘স্টাডি অব এ ক্রো’, ‘টু ফেসেস’ (তাঁর শেষ চিত্র) উল্লেখযোগ্য। তাঁর শিল্পে সাঁওতাল জনগোষ্ঠী, গরু, নৌকা ওগ্রামীণ জীবনের বলিষ্ঠতা ফুটে ওঠে। তিনি ইউরোপীয় আধুনিকতা ওবাঙালি লোককলার মিশ্রণ ঘটান। ১৯৭৪ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট লাভ করেন।

জয়নুল আবেদীন শুধু শিল্পী নন, সাংস্কৃতিক নেতাও। তিনি ক্যালকাটা গ্রুপ অব প্রোগ্রেসিভ আর্টিস্টসের সদস্য ছিলেন। বাংলা ভাষা আন্দোলনে অংশ নেন ও মুক্তিযুদ্ধে সাংস্কৃতিক ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি সোনারগাঁওয়ে লোকশিল্প জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করেন। যাতে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প সংরক্ষিত হয়। ময়মনসিংহে জয়নুল আবেদীন সংগ্রহশালা তাঁর ৭০টি চিত্র সংরক্ষণ করে, যদিও ১৯৮২ সালে কিছু চুরি হয়। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে তিনি জাহানারা আবেদীনকে বিয়ে করেন ওতাদের তিন ছেলে: মৈনুল, খায়রুল ওসারোয়ার। ১৯৭৬ সালে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মারা যান। তাঁর শেষ চিত্র ‘টু ফেসেস’ মৃত্যুর আগে সম্পূর্ণ করেন।

আজ জয়নুল আবেদীনের উত্তরাধিকার বাংলাদেশের শিল্পশিক্ষা ওসংস্কৃতিতে জীবন্ত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন আর্টস ভবন তাঁর নামে নামকরণ করা হয়েছে। ২০১৪ সালে তাঁর ১০০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপিত হয় । তাঁর চিত্রগুলো নিলামে উচ্চ মূল্যে বিক্রি হয়, যেমন ২০২৪ সালে ‘আনটাইটেলড’ ৬৯২,০৪৮ ডলারে বিক্রি হয়। জয়নুল আবেদীন সম্পর্কে আরও জানতে চাইলে, তাঁর শিল্প দেখে বোঝা যায় কীভাবে একজন শিল্পী সমাজের দর্পণ হয়ে ওঠেন। তাঁর কাজে বাঙালির সংগ্রাম ওসৌন্দর্য মিশে আছে যা আজও অনুপ্রেরণা যোগায়।

শেষ কথা

প্রত্যাশা করি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে জয়নুল আবেদীন সম্পর্কে ১০ টি বাক্য জানানোর পাশাপাশি বিস্তারিত তথ্য পাশাপাশি বিস্তারিত তথ্য জানাতে পেরেছি। আর্টিকেলটি সম্পর্কে কোন মতামত থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। 

Scroll to Top