শবে বরাত মুসলমানদের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিবস। অনেক মুসলিম ভাই-বোনেরা নামাজ এবং রোজা রাখার মাধ্যমে শবেবরাত উদযাপন করে থাকে। শবে বরাতের এই আমল প্রসঙ্গে এক হাদিসে পাওয়া যায়, আম্মাজান আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, শাবান মাসের প্রায় পুরোটা সময়ই রাসূলে কারীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোজা রাখতেন।
কিন্তু কেন শাবান মাসে এত বেশি রোজা রাখতেন এই প্রসঙ্গে তিনি (সাঃ) বলেন, এ মাসে রব্বুল আলামীনের কাছে মানুষের কর্ম বা আমলনামা উঠানো হয়। আর আমি ভালোবাসি যে, আমার রোজা রাখা অবস্থায় আমার আমলগুলো উঠানো হোক। অনেকেই শবে বরাতের রোজার নিয়ত সম্পর্কে জানতে চায় যা নিচে বর্ণনা করা হয়েছে।
শবে বরাতের রোজার নিয়ত
আমাদের মধ্যে অনেকেই ভেবে থাকি নামাজ কিংবা রোজার ক্ষেত্রে মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত করতে হয় যা সম্পূর্ণ ভুল। আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্য নিয়ে রোজা রাখলেই রোজার নিয়ত হয়ে যায়। তবে আপনারা যারা রোজার নিয়ত মুখে উচ্চারণ করতে চান তাদের জন্য নিচে রোজার নিয়ত দেওয়া হলো।
আরবি নিয়তঃ نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
এছাড়াও আপনি চাইলে বাংলাতেও এভাবে নিয়ত করতে পারেন আমি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য শবে বরাতের রোজা রাখার নিয়ত করছি।
শবে বরাতের রোজা
বিভিন্ন হাদিস থেকে দেখা যায় হিজরী শাবান মাসে প্রিয় নবী (সাঃ) অনেক বেশি রোজা রাখতেন। আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল শাবান মাসের রোজা অনেক পছন্দ করতেন। অপর এক হাদিসে আম্মাজান আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে।
আল্লাহর নবী (সাঃ) রমজান মাস ব্যতীত শাবান মাসের তুলনায় অন্য কোন মাসে এত বেশি রোজা রাখতেন না। বিভিন্ন হাদিস থেকে পাওয়া যায় রাসূলুল্লাহ (সাঃ) শাবান মাসে কখনো ১০টি নফল রোজা, কখনো ২০টি নফল রোজা কখনো আরও বেশি রোজা রাখতেন।
শবে বরাতের রোজা কয়টি ২০২৪
শাবান মাসের রোজার ব্যাপারে একটি হাদীসে পাওয়া যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যখন তোমাদের কাছে শাবানের রাত ( শবে বরাত ) হাজির হবে, তখন তোমরা সেই রাত জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত বন্দেগী তথা নামাজ, জিকির ও কুরআন তিলাওয়াত কর এবং দিনের বেলা সাওম পালন কর”।
উপরোক্ত হাদীসটি থেকে বোঝা যায় প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্য শাবানের অর্থাৎ শবে বরাতের দিন দিনের বেলায় রোজা পালন করার কথা বলেছেন। তাই বলা যায় শবে বরাত উপলক্ষে একদিন রোজা রাখা উচিত তবে আমরা চেষ্টা করব শাবান মাসে আরো বেশি বেশি রোজা রাখর।
শবে বরাতের রোজার সেহরির শেষ সময়
আল্লাহর সন্তুষ্ট লাভের উদ্দেশ্যে সূর্যাস্ত থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, পাপাচার থেকে বিরত থাকাকে রোজা বলে। শবে বরাত সহ সকল রোজার ক্ষেত্রে ফজরের আযানের আগে সেহরি খাওয়ার সময় শেষ হয়ে যায়। তবে ফজরের আযানের ৫-১০ মিনিট আগে সেহরি খাওয়া শেষ করে রোজা রাখার নিয়ত করা উত্তম।
শবে বরাত রোজা রাখার নিয়ম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শবে বরাতের রোজার জন্য ভিন্ন কোন নিয়মের নির্দেশনা দেননি। তিনি (সাঃ) বলেছেন মধ্য শাবানের দিনের বেলায় রোজা রাখতে। তাই সাধারণ নফল রোজার মতোই ফজরের আজানের আগে সেহরি শবে বরাতের রোজার নিয়ত করতে হবে। অতঃপর মাগরিবের আজানের পর ইফতারের মাধ্যমে রোজা সম্পন্ন করতে হবে।
এছাড়া আপনি চাইলে আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ অর্থাৎ আইয়্যামে বিজের রোজা রাখতে পারেন কেননা এই রোজার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। আইয়্যামে বিজের রোজা রাখলে আপনাকে আলাদা করে শবে বরাত রোজা রাখতে হবে না। কেননা আইয়্যামে বিজের রোজার মাধ্য দিয়ে আপনার শবে বরাতের রোজা সম্পূর্ণ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
শেষ কথা
শবে বরাতের অর্থাৎ মধ্য সাবানের দিনের বেলা রোজা রাখতে আমাদেরকে উৎসাহিত করা হয়েছে। তাই আজকের এই পোষ্টের মাধ্যমে আমরা আপনাদেরকে শবে বরাতের রোজার নিয়ত সম্পর্কে বিস্তারিত জানানোর চেষ্টা করেছি। যা আপনাদের সঠিক নিয়মে রোজা সম্পন্ন করতে সাহায্য করবে ইনশাল্লাহ।