মানুষ সহ সকল মেরুদন্ডী প্রাণীর সংবহন তন্ত্রের একটি দৈহিক তরলকে রক্ত বলা হয়। রক্তের প্রধান কাজ হল মানব শরীরের সকল অঙ্গ প্রত্যঙ্গের মধ্যে অক্সিজেন প্রবাহিত করা। মানব শরীরের বিভিন্ন কোষের বিপাকীয় বর্জ্য পদার্থ সমূহ রক্ত একই কোষ থেকে দূরে সরিয়ে নিতে সাহায্য করে। অনেকেই রক্ত সম্পর্কিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত থাকার কারণে বিভিন্ন সময় শরীরে রক্তের ঘাটতি দেখা দেয়। এক ব্যাগ রক্তের দাম কত হবে তা রক্তের ধরনের উপর নির্ভর করে।
কেননা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রক্তকে রিসাইকেল করে বিভিন্ন ভাবে বিক্রি করে থাকে। যেমন রক্ত থেকে বিভিন্ন কণিকা আলাদা করে তা বিক্রি করা হয়। এতে করে যার যে রক্ত কণিকার ঘাটতি রয়েছে তারা শুধু মাত্র সেই রক্ত কণিকা কিনে নিজেদের ঘাটতি পূরণ করতে পারে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে খুব অল্প টাকার মধ্যেই প্রয়োজনীয় রক্ত সংগ্রহ করা যায়।
এক ব্যাগ রক্তের দাম কত
জীবনে চলার পথে অনেক সময় আমাদের নানা দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়। এ সকল দুর্ঘটনায় অধিক পরিমাণে রক্ত ক্ষরণ হলে আলাদাভাবে বাহির থেকে রক্ত শরীরে পুশ করতে হয়। এই ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কারো সাথে রক্তের গ্রুপ মিলে থাকলে বাইরে থেকে রক্ত না কেনাটাই উত্তম।
এছাড়া ব্লাড ক্যান্সার রয়েছে তাদের নিয়মিত রক্তের প্রয়োজন হওয়ায় পরিবারের সদস্যদের থেকে সম্পূর্ণ রক্ত নেওয়া সম্ভব হয় না যার কারণে রক্ত কিনতে হয়। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের রক্তের মূল্য নির্ধারণ করে থাকে। তবে বর্তমানে যে রক্ত হতে কোন কণিকা আলাদা করা হয়নি এমন এক ব্যাগ রক্তের দাম আনুমানিক ৮০০-৯০০ টাকা হয়ে থাকে।
A ও B পজেটিভ রক্তের দাম
সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক সুস্থ মানুষের শরীরে ৪ থেকে ৬ লিটার পরিমাণ রক্ত থাকে। বেশ কিছু ক্যাটাগরির রক্ত পাওয়া যায় যার মধ্যে A ও B পজেটিভ রক্ত অনেকের মধ্যেই পাওয়া যায়। যার কারণে A ও B পজেটিভ রক্তের জন্য সংকটের মুখে পড়তে হয় না। তবে অনেক সময় রক্ত দানকারী কাউকে পাওয়া না গেলে রক্ত কিনে প্রতিস্থাপন করতে হয়।
সাধারণ ভাবে যে ব্যাগের মাধ্যমে রক্ত নেওয়া হয় তাতে ৪৫০ মি.লি লিটার রক্ত নেওয়া যায়। একজন মানুষ থেকে প্রথম বার এক ব্যাগের বেশি রক্ত নেওয়া হয় না। বর্তমানে A ও B পজেটিভ রক্ত হতে আলাদা করা অনুচক্রিকার দাম প্রতি ইউনিট ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা হয়ে থাকে।
“o” নেগেটিভ রক্তের দাম ২০২৫
নেগেটিভ রক্ত খুব কম মানুষের শরীরে পাওয়া যায়। নেগেটিভ রক্ত সব সময় সকল হাসপাতালেই পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাই যারা নেগেটিভ রক্তের অধিকারী তাদের সকলকে নিয়মিত রক্তদান করা উচিত। যাতে করে কারো নেগেটিভ রক্তের প্রয়োজন হলে সহজেই রক্ত পেতে পারে।
মানব শরীর থেকে প্রতিবার মাত্র ৪৫০ মিলিলিটার রক্ত নেয়া হয় যার কারণে রক্তদান করলে মানব শরীরের কোন প্রকার ক্ষতি হওয়ার তেমন কোন সম্ভাবনা নেই। তবে অনেক সময় “o” নেগেটিভ গ্রুপের রক্ত আজ থাকা মানুষ খুঁজে পাওয়া যায় না যার কারণে রক্ত কেনার প্রয়োজন পড়ে। বর্তমানে “o” নেগেটিভ এক ব্যাগ রক্তের দাম আনুমানিক ১২০০-১৫০০ টাকা হয়ে থাকে।
ভারতে রক্তের দাম কত?
বাংলাদেশের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতেও অনেক সময় রক্ত বেচাকেনার প্রয়োজন করে। কেননা ভারত সরকার এখনো সকলের জন্য ফ্রি রক্ত প্রদান সেবা চালু করতে পারেনি। যার কারণে ভারতে কারো রক্তের প্রয়োজন হলে সরকারি হাসপাতাল কিংবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে রক্ত কিনতে হয়।
ভারতে সরকারি ব্লাড ব্যাংকে রক্তের দাম ১০১৫ টাকা বা এর আশেপাশে হয়ে থাকে। তবে ভারতের বেসরকারি ব্লাড ব্যাংক গুলো সম্পূর্ণ রক্ত কণিকার জন্য ১৪৫০ টাকার বেশি চার্জ করতে পারে না। এছাড়াও প্লেট এবং প্লাসমা কিনতে ৪০০ টাকা ও রক্ত থেকে আলাদা করা রক্ত রস কিনতে ৬০০-৭০০ খরচ করতে হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রক্তের দাম ২০২৫
পৃথিবীর সবথেকে ধনী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবার উপরে সারিতে রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শত শত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলেও এখন পর্যন্ত রক্তের কোনো বিকল্প তৈরি করতে পারেনি। প্রতিনিয়ত বিভিন্ন কারণে রক্তের রক্ত প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে।
বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক ইউনিট রক্তের দাম ২০০ ডলার থেকে ২৫০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২০২৩ সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০ টি হাসপাতালে রক্ত সঞ্চালনের পরীক্ষায় হাসপাতালের এক ইউনিট লোহিত রক্ত কণিকার মূল্য ২১৪ ডলার প্রদান করতে হয়েছে।
শেষ কথা
রক্ত মানব শরীরের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তরল যা তিনটি উপাদান নিয়ে গঠিত হয়। মানুষের জীবনে কখন দুর্ঘটনা নেমে আসে তা বলা মুশকিল তাই এক ব্যাগ রক্তের দাম জানা থাকলে বিপদের সময় রক্ত কিনতে কোন প্রকার সমস্যায় পড়তে হয় না।